হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য আছে সরকারের নানান পদক্ষেপ
দৃষ্টি ভংগী পরিবর্ত ন করলেই হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনা সম্ভব, ২০১৪ সালে ৭টি প্রতিষ্ঠানে হিজড়া নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় চাকরিতে আবেদন করার পর একজন হিজড়াকে মেডিকেল পরীক্ষার (আসলে হিজড়া কি না যাচাইয়ের জন্য) জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি মেডিকেল থেকে পালিয়ে যান। এরপর আর বিষয়টি তেমন এগোয়নি।
অনেকেই মনে করেন, চাকরিতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে হিজড়াদেরও অনীহা রয়েছে। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করেন এরকম সংগঠনের সাথে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, সামাজিক বাস্তবতায় হিজড়াদের অধিকাংশই পড়ালেখার সুযোগ পান না। ফলে তারা কী করে ট্রাফিক পুলিশের চাকরি করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এজন্য সরকারের উদ্যোগেই তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। প্রয়োজন তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা যেতে পারে।
তবে সবার আগে প্রয়োজন হিজড়াদের সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং তাদের ব্যাপারে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ভারতে শবনম মৌসি নামে একজন হিজড়া লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে যশোরের বাঘারপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হয়েছিলেন সুমি নামে একজন হিজড়া। যদিও তিনি জয়ী হতে পারেননি। ভোটে জিতলে হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
ওই বছর সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভায়ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দিথী নামে আরেকজন হিজড়া প্রার্থী। তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেপুলে নাই। খাওনের কেউ নাই। জিতলে আমি জনগণের সেবা করব। বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করব। রাস্তাঘাট করব। আর্সেনিক মুক্ত কল করনের লাইগ্যা সহযোগিতা করব।’
হিজড়াদের বড় সংকট পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং এ কারণে তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়। অনেক স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা হিজড়াও নিজেদের পরিচয় প্রকাশে লজ্জা বোধ করেন। ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে শাম্মী নামে এক হিজড়ার বরাত দিয়ে লেখা হয়, ‘তাদের অনেক সম্পত্তি; কিন্তু সেখান থেকে তাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। সব কিছু ভাইয়ের নামে। বসতবাড়ি ছাড়াও অন্যখানে একখণ্ড জমি রয়েছে তাদের। সেখানে একটা ঘর করতে চেয়েছিলেন শাম্মী। কিন্তু তাও তার ভাই করতে দেননি। বাধ্য হয়ে তিনি ডেরায় (হিজড়াদের বাসস্থান) থাকেন।’
ফলে বেঁচে থাকার জন্য হিজড়াদের চাঁদাবাজি যেমন একটি নির্মম বাস্তবতা, তেমনি অনেক ভুয়া হিজড়াও এই সুযোগে এটিকে বিকল্প পেশা হিসেবে নিয়ে পয়সা কামাচ্ছে। ফলে এই সমস্যা সমাধানে কোনো আপদকালীন ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং এমন একটি আইন প্রণয়ন যাতে কোনো পরিবারে হিজড়া সন্তানের জন্ম হলে ওই পরিবার তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে না পারে। অর্থাৎ পরিবারের অন্য স্বাভাবিক সন্তানদের সাথেই হিজড়া শিশুও বেড়ে উঠবে—সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন করা দরকার। সেইসাথে নকল বা ভুয়া হিজড়াদের শনাক্ত করে রাস্তার মোড়ে তাদের চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর হওয়া দরকার।