ধর্ষণ বিস্তার নিয়ে মিজানুর রহমান আজহারি হুজুর যা বলল

রফিকুল ইসলাম,বিভাগীয় সম্পাদক:বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা হচ্ছে। এই দৃশ্য ধারন করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই বর্বরতা সহ্য ক্ষমতার বাইরে। কি একটা অসুস্থ প্রজন্ম গড়ে উঠেছে এ দেশে! আমাদের পরিবারগুলোতে এভাবে ধর্ষক গড়ে উঠল আর আমরা কেউ টেরই পেলাম না। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। সাধারণ জনগণ না পারছে কইতে, না পারছে সইতে। বিচার চেয়ে মানববন্ধন করতে গেলে সেখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর বাধা। এভাবে বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত জনগণ যখন বিচার করার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিবে তখন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তাই, ধর্ষণের নজিরবিহীন শাস্তি নিশ্চিত হোক— এটাই আজ গণমানুষের দাবী। . ধর্ষণ হচ্ছে একটি সেক্সুয়াল ক্রাইম বা সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। আদতে ধর্ষণ কোন যৌনতা নয়, এটা পুরুষের ক্ষমতার অপব্যবহার। আর ক্ষমতার ছায়াতলেই মূলত বেড়ে ওঠে ধর্ষকরা। সাধারণত, মানুষ যেটা দেখে দেখে শিখে সেটা সে নিজে ট্রাই করে দেখতে চায়। সিনেমাতে পরিবারের সবাই মিলে ধর্ষণের দৃশ্য উপভোগ করা সমাজে এর চেয়ে ভালো কিছু হওয়ার তো কথা ছিল না। যা হওয়ার তাই তো হচ্ছে। উঠতি তরুণ বয়সে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার স্বাদ পেলে— সে ক্ষমতা কে না খাটাতে চায়? দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা যখন ক্রিমিনাল ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠে মূলত তখন অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত উগ্র ক্ষমতার জোরেই এরা ধর্ষণের সাহস করে। ক্ষমতার বলে ও আইনের ফাঁকফোকর মাড়িয়ে এরা সব সময় থাকে ধরা-ছোঁয়ার আড়ালে। . বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশে একটি ছেলে অথবা মেয়ে গড়ে ১৪/১৫ বছর বয়সেই পরিপূর্ণ সেক্সুয়াল অ্যাবিলিটি লাভ করে থাকে। কিন্তু তারা বিয়ের পিড়িতে বসে আরো ১০/১৫ বছর পর। এই লম্বা সময় ধরে যৌন ক্ষুধা নিবারণের কোন বৈধ সুযোগ তাদের হাতে নেই। উপরন্তু বিয়ের প্রশ্ন উঠলেই আসে সামাজিক যতো নিয়ম কানুনের দোহাই। . যৌনশক্তি আল্লাহ তা’আলার দেয়া এক অমূল্য সম্পদ। এই সেন্সিটিভ এনার্জিকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তবে এর অপব্যবহার হবে এটাই স্বাভাবিক। তার উপর যদি থাকে নৈতিক অধ:পতন এবং উগ্র ক্ষমতা প্রদর্শণের সুযোগ তাহলে তো ধর্ষণ ঠেকাবার আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। . এদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা বেশিরভাগ সময় সেক্সুয়ালি ওভার চার্জড হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনে আর বিলবোর্ডে সর্বদা শোভা পাচ্ছে স্বল্প বসনা নারী যেখানে তার দেহের আকর্ষণীয় সব উঁচুনিচু ভাঁজগুলো প্রেজেন্ট করা হচ্ছে, ক্রিকেট খেলার মাঝখানে চিয়ার্সগার্লসদের বেলি ড্যান্স, মুঠোফোনে সহজলভ্য সেক্সুয়াল কন্টেন্ট, ওয়েব সিরিজ, পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল সিনেমা আরো কতো কি। এগুলো তরুণদের মাঝে যৌন উন্মাদনা তৈরী করছে। . নারীদেহকে যারা সেক্স অবজেক্ট হিসেবে ভোগের সস্তা পণ্য করে উপস্থাপন করে এরা সবাই মূলত ধর্ষক। এই সেক্স অবজেক্ট দেখে দেখে তরুণরা ফুল্লি চার্জড হয়ে থাকে। কিন্তু হালাল পন্থায় এই এনার্জি রিলিজ করার কি তার কোন জায়গা আছে?? না, নেই ! ফলাফলস্বরূপ চলছে মাস্টারবেসন, বিবাহ বহির্ভূত শারিরীক সম্পর্ক, আর ক্ষমতা থাকলে বীরদর্পে ধর্ষণ। সংবাদমাধ্যম, গণমাধ্যম, ফেইসবুকের নিউজফিডে যেন একটাই নিউজ— ধর্ষণ! ধর্ষণ! আর ধর্ষণ! . প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে যদি হত্যা ও ধর্ষণের জন্য আলাদা একটি পাতা নির্ধারিত থাকে, ওই পাতা কোনোদিন খালি থাকবে বলে মনে হয় না। প্রতিটি জেলায় প্রায় প্রতিদিন এজাতীয় ঘটনা ঘটছে। তাই, এই মহামারির প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে— বিয়েকে সহজ করুন, অশ্লীলতার সকল পথ বন্ধ করুন, উগ্র ক্ষমতার প্রয়োগ থামিয়ে দিন এবং সন্তানদের নৈতিকতা ও মানবিকতার সবক দিন। . দিনরাত তরুণসমাজকে কাছে আসার গল্প শোনাবেন, নোংরা রাজনীতির পাওয়ার গেইম শেখাবেন। আর ধর্ষণ করলে হই চই শুরু করবেন। ওয়াট অ্যা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ! নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, বইপুস্তক এবং ইন্টারনেট সব যায়গায় নগ্নতা ও যৌনতায় ভরপুর থাকবে, বিয়ে কঠিন হবে, ক্ষমতার রাজনৈতিক মহড়া চলতে থাকবে আর কিছু ধর্ষককে ধরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেই ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে—এ ধারণা নিছক শিশুসুলভ ধারণা বলেই আমার কাছে মনে হয়। . মানুষকে মানুষ বানানো এতো সহজ কাজ নয়। আমি প্রায়ই বলে থাকি যে গরুর পেট থেকে বের হলেই সেটা গরু হয়, ছাগলের পেট থেকে বের হলেই সেটা ছাগল হয় কিন্তু মানুষের পেট থেকে বের হলেই সেটা মানুষ হয়ে যায়না বরং সেটাকে মানুষ বানাতে হয়। মানুষকে মানুষ বানানো না গেলে তার মধ্যে পশুসুলভ আচরণ ডেভেলপ করে। তখন তার মধ্যে আর মনুষ্যত্ব থাকে না। এমনকি কখনো কখনো সে পশুকেও ছাড়িয়ে যায়। আর নিবিড় পরিচর্যা, নৈতিক সুশিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চা তাকে ধীরে ধীরে আলোকিত মহামানবে পরিণত করে। তাই, মানুষকে মানুষ বানাতে দরকার নৈতিক শিক্ষা ও মানবিকতার চর্চা। পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয়ভাবে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিকতার চর্চা করা খুব জরুরী। . যদি আমরা আসলেই সমাজ থেকে ধর্ষণ বন্ধ করতে চাই— তাহলে আমাদেরকে সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করে অপরাধপ্রবণতা বিরোধী এবং মানবতাবান্ধব একটি সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও খোদাভীতি সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে। শুধু তাই নয়, আগে শাসকশ্রেণী ও অভিভাবকদের নিজেদেরকে খোদাভীতিসম্পন্ন মানুষে পরিণত করতে হবে। তবেই কেবল সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। . ধর্ষণ ঘটনার তীব্রতা বোঝাতে অনেকে লিখছেন— মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। কিন্তু মধ্যযুগীয় বর্বরতা বা আইয়্যামে জাহিলিয়াতের বর্বরতাকে কিভাবে সমাধান করা হয়েছিল সে বয়ান দিতে গেলে তো তখন তারা কানে কুলুপ এঁটে রাখে। আসলে, মানব জাতির স্রষ্টা মহান আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন যে সামাজিক ভারসাম্য অক্ষুন্ন রাখতে ব্যভিচার ও ধর্ষণের শাস্তি কেমন হওয়া উচিত। তাই, ইসলামে ব্যভিচার ও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মানবিক সমাজব্যবস্থা, উন্নত চারিত্রিক মূল্যবোধ এবং অপরাধপ্রবণদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাপণা দিয়েই মূলত রাসূলুল্লাহ (ﷺ‬) মধ্যযুগীয় বর্বরতা বা আইয়্যামে জাহিলিয়াতের বর্বরতাকে কল্যাণে ভরপুর এক মানবিক সমাজে রূপান্তর করেছিলেন এবং এক সোনালি যুগের গোড়াপত্তন করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Instagram
WhatsApp