সমস্ত পুরুষদের জন্য লেখা যাঁদের একটা ভরসার কাঁধের খুব দরকার

কৃপা বসু:-আমি জানি না মেয়েরা কোনোরকম জাদু করতে পারে কিনা! কিন্তু এটুকু জানি, ছেলেদের ভেতর একটা অদ্ভুত জাদু আছে, ছেলেদের ভেতর একটা আশ্চর্য জীবনশক্তি আছে, ছেলেরা জন্মের সময় নিশ্চই স্পেশাল কিছু খায় হয়তো….

ছেলেরা অদ্ভুত ভাবে কান্না জমিয়ে রাখতে পারে, ছেলেরা ভয় পেলেও নিজের প্রিয়জনদের বাঁচানোর জন্য বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে হত্যাকারী, খুনি কিংবা রেপিস্টদের সামনে বিনা অস্ত্রেই ঠিক যেমনটা সিনেমায় দেখায়, সেরকমই….

ছেলেরা অদ্ভুত ভাবে রোদে পুড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমিকার জন্য গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তিন তলা বাড়ির নীচে, পকেট খালি করে নিজের পছন্দের মানুষকে উপহার কিনে দিতে পারে, সারাদিন অফিস সেরে ভিড় বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে ফিরে প্রেমিকার জন্য সারারাত জাগতে পারে…

ছেঁড়া জুতো পরে মাঝরাতে অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনে আনতে পারে, পেটে খিদে নিয়েও পাড়ার কুকুরটাকে নিজের টিফিন বক্সে পড়ে থাকা শুকনো রুটি দুটো খাইয়ে দিতে পারে….

নিজেরা বৃষ্টিতে ভিজেও অন্যের মাথায় ছাতা ধরতে পারে, আর ডাটসে হাসতে হাসতে বলতে পারে “আমার কিছু হবে না, তোমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, ছাতাটা নাও”…..

ছেলেদের বোধহয় কখনো শরীর খারাপ হয় না, ওরা অন্যের শরীর খারাপের সময় গোটারাত হসপিটালের বাইরে অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু নিজেদের শরীর খারাপ হলে নিজেরাই চুপচাপ সারিয়ে তোলে, মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারে না…

ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে যেতে চাইলে একবার হলেও হাতটা টেনে ধরে বলে “আমায় ছেড়ে যেও না, তোমায় ছাড়া হয়তো বেঁচে থাকবো কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও রাতের বেলায় ভীষণভাবে মরে যাওয়ার ইচ্ছে হবে। প্লিজ আমায় ছেড়ে যেওনা”….

কিন্তু যে যায়, তার ভেতর কোনো অনুভূতি থাকে না, সে বরং উল্টোদিকের মানুষটার সমস্ত অনুভূতিকে মেরে পিষে তার উপর দিয়ে হেঁটে যায়….

আর ছেলেরা তারপর কিছুদিন লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে, ফেসবুক টেসবুক ডিএক্টিভেট করে নিজের ভেতর ডুবে যায়, মদের বোতল কিংবা সিগারেটের ধোঁয়ায় সমস্ত মনখারাপ এক ঝটকায় উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, লেকিন কুছ দাগ বহত গেহরে হোতে হে….

কিছু ব্যথা, কিছু ক্ষত কোনোদিন মোছা যায় না, বৃষ্টি হলে, জোরে হাওয়া দিলে, ঝড় উঠলে বিশ্বাসঘাতক মানুষের কথা বেশি করে মনে পড়ে…

ছেলেদের মনখারাপ হলেও টের পাওয়া যায় না, কারণ ওরা লোক হাসানোর জাদুমন্ত্র জানে, পরিস্থিতি শিখিয়ে দেয়….

ছেলেরা প্রেমে পড়লে প্রেমিকের চেয়েও বেশি পরিবার হয়ে উঠতে চায় কাছের মানুষটার কাছে….

একটা পরিবারে যেমন মা, বাবা, ভাই, বোন, সবাই থাকে…

ছেলেরা একাই মা, বাবা, ভাই বোনের দায়িত্ব পালন করতে চায়….

প্রেমিকা বা স্ত্রীর কলেজের ফর্ম ফিলাপ থেকে শুরু করে বাজার উপচে শাক সবজি আনা থেকে শুরু করে, ভালো রান্না করে বউকে চমকে দেওয়ার থেকে শুরু করে, প্রেমিকার জন্মদিনে নিজের হাতে পায়েস বানিয়ে খাওয়ানোর থেকে শুরু করে শশুরবাড়ির প্রতিটা সুবিধে অসুবিধেয় মুখ বুজে নিজের সবটুকু দায়িত্ব পালন করে যায়….

হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্ট পরতে পরতে ছেলেরা একটা গোটা সংসারের দায়িত্ব নিতে শিখে যায়….

যে ছেলেটা নিজের দাঁড়ি কাটতে গিয়ে গাল চিরে ফেলতো ব্লেড দিয়ে ভুল করে, সেই ছেলেটা শিখে যায় কোথায় চাল নুন তেল রাখা আছে, আর কোথায় রাখা আছে অফিসের ফাইল….

ছেলেরা অদ্ভুত ভাবে ভাঙা শিরদাঁড়া নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে পারে, ছেলেদের ভেতর ক্লান্তি নেই, শুধু দীর্ঘনিঃশ্বাস আছে।

মাঝেসাঝে গভীর রাতে ওরা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, ভয় পায়, কাউকে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরতে চায়, আঁচল টেনে ধরে বলতে চায় “আমায় একটু বুকে করে আগলে রাখতে পারো”, তারপর কোলে মাথা রেখে কুঁকড়ে ঘুমিয়ে পড়তে চায় ওরা…..

শুধু ছেলেদের বোঝার মতো একটা মানুষের খুব দরকার পড়ে…

কৃপা বসু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *